বরিশাল প্রতিনিধি: জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) রেজিস্ট্রার ডা. সি এইচ রবিনের বাসায় অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বরিশালের উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কপপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন শিশু নিপা বাড়ৈ (১১) নিখোঁজ হওয়ার ২৩ ঘণ্টা পর তাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শনিবার ভোর ৪টার দিকে পার্শ্ববর্তী আগৈলঝাড়া উপজেলার আশোয়ার গ্রামের জনৈক বিমলের বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল আহসান।
তিনি জানান, ওই শিশুটির কাকা পরিচয়দানকারী তপন বাড়ৈর মামা শ্বশুড় বিমলের বাড়ি থেকে নিপা বাড়ৈকে উদ্ধার করা হয়। শিশুটিকে যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিয়ে যাওয়ার কারণ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
নিপা বাড়ৈ (১১) উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের জামবাড়ি গ্রামের ননী বাড়ৈর মেয়ে। তার বাবা একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। তার মা দুই বছর আগে অন্যত্র বিয়ে করে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে নিপা মেঝ।
জানা গেছে, অভাবের সংসারে বেঁচে থাকার জন্য গত ৬ মাস আগে ঢাকার জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালের অর্থোপেডিক ও ট্রমা বিশেষজ্ঞ ডা. সিএইএস রবিনের শ্যামলীর বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ শুরু করে নিপা। ডা. রবিন চন্দ্রের বাড়িও একই উপজেলার ওটরা ইউনিয়নের গজালিয়া গ্রামে। বিভিন্ন সময় চিকিৎসকের স্ত্রী রাখি দাস নানা অজুহাতে তার উপর শারীরিক নির্যাতন করতো। অব্যাহত নির্যাতনে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে নির্যাতনকারী লোক মারফত গত বুধবার সন্ধ্যায় তাকে ঢাকা থেকে উজিরপুরের জামবাড়ি তার গ্রামের বাড়ির কাছে একটি দোকানের সামনে ফেলে যায়। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ওই রাতেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরদিন বৃহস্পতিবার রাতেই তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তার স্বজনরা। কিন্তু শিশুটি অসুস্থ থাকায় চিকিৎসকরা তাকে ছাড়পত্র দিতে রাজি হচ্ছিলেন না। শুক্রবার ভোররাতে শিশুটিকে নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে লাপাত্তা হয় তার স্বজনরা। এ ঘটনায় শুক্রবার বেলা ১১টায় উজিরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন উজিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. শামসুদ্দোহা তৌহিদ। নিখোঁজের ২৩ ঘণ্টা পর এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।
শিশু গৃহকর্মী নিপা জানায়, কাজের শুরু থেকেই সামান্য ভুলত্রুটি হলেই ডাক্তার রবিনের স্ত্রী রাখি দাস তার শরীরে কখনো খুন্তি দিয়ে আঘাত করতো, কখনো বা ধারালো চাকু দিয়ে কোপ মারতো।
নিপার স্বজনদের অভিযোগ, ছোটখাটো অজুহাতে তাকে বেদম মারধর করতেন চিকিৎসকের স্ত্রী রাখি দাস। তার গলা চেপে ধরা হতো এবং দেয়ালের সঙ্গে মাথা ঠুকে দেওয়া হতো। দিনের পর দিন এই অমানুষিক নির্যাতনে তার শরীরের দুই হাত, হাতের আঙুল, মাথা, গলা, মুখমণ্ডল ও পিঠসহ বিভিন্ন স্থানে অগণিত ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
ঢা/জিএমএস/আইএইচই