এ এক বিরাট রহস্য। এভাবেই চলতে থাকলে শেষ পর্যন্ত কাজের প্রতি চরম অনীহা আর হতাশা তৈরী হবার একটা সম্ভাবনা খুবই প্রবল বলে আমার মনে হচ্ছে। পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায়, বল প্রয়োগে কোন বস্তুর সরণ ঘটলে তাকে কাজ বলে। আর অর্থনীতির ভাষায় কাজ মানে হলো শ্রম কিংবা অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন।
কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অন্য। পদার্থ বিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুযায়ী আমি কাজ করলেও অর্থনৈতিক পরিভাষায় আমি কাজ করি না। কেননা আমি শ্রম বিনিয়োগ করতে পারিনা। ব্যাপারটা এমন নয় যে আমি সে শ্রমের বাজারের বাইরে অবস্থান করি।
সেই একই জায়গায়। কিন্তু কেন জানি লোকে আমার কাছ থেকে পেশাদারীত্ব নয় বরং আমার বিনয়, ভক্তি এবং দানশীল মনোভাবটাই সব সময় আশা করে। আমিও নৈতিকতার চরম ধারক এবং বাহক হিসেবে পেশাদারীত্ব কে দূরে ঠেলে দেই বারংবার। বিনয়, ভক্তি এবং দানশীল মনোভাব থাকা মহত্ত্ব লাভের লক্ষ্যণ।
সুতরাং আমার তো উচিত আমার এই সমস্ত গুণের কথা ভেবে খুব খুশী থাকা। তবে আমি আফসোস কেন করছি! কেন আমার বাক্যের ভেতর অভিযোগ এর গন্ধ? এর একটাই কারণ, আমি দীন দেখে দান করতে পারছি না। সম্ভব হচ্ছে না।
আমি সব সময় তুলনামূলক ধনী এবং সামর্থ্যবানদের দান করছি কিংবা করতে বাধ্য হচ্ছি। কিন্ত সত্যিকার অর্থেই যাদেরকে দান করার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে থাকছে তাদের দিকে তাকিয়ে আমি অসহায় আর বিরক্তি বোধ করছি। অর্থনীতির নীতি বিরুদ্ধ হলেও পদার্থ বিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুযায়ী আমি প্রতিদিন কাজ করে যাই।
বেলা শেষে কোন অস্থায়ী নিবাসে ফিরে আসি আর ভাবতে থাকি, পৃথিবীর এই আর্থসামাজিক অবকাঠামোতে আমার অবস্থান আসলে কোথায়? আমি শ্রমজীবী না শ্রমদানকারী? এ এক বিরাট রহস্য হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আমার সামনে।
আমি জানিনা আমি একা নাকি এমন আরও অনেকেই আছেন যারা আমারই মত জীবন যাপন করেন। যারা দীন দেখে দান না করতে পারার অপরাধবোধ নিয়ে প্রতিরাতে ঘুমাতে যান।
আহমেদ সাব্বির
লেখক, চলচ্চিত্র নির্মাতা
ঢা/এসআর